
প্রকাশিত: Sat, Dec 30, 2023 8:28 PM আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 3:42 PM
[১]কক্সবাজারে ৫৫ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমিতে বোরো চাষ
হাবিবুর রহমান সোহেল, কক্সবাজার: [২] আমনের পর কৃষকের ব্যস্ততা এখন বোরো বীজতলা নিয়ে। আমন ধান কাটাই-মাড়াই শেষ হতেই তীব্র শীত উপেক্ষা করে বোরো চাষাবাদের প্রস্তুতি হিসেবে বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কক্সবাজার জেলার কৃষকরা।
[৩] ইতিমধ্যে ২ হাজার ৭৬৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১২৪৩ হেক্টর বীজতলা প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছে কৃষকেরা। এ বীজতলার চারা দিয়ে পরবর্তীতে ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরোধান আবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
[৪] কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে (২০২৩-২৪ অর্থবছরে) কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলায় ২ লাখ ২৭ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জমি চাষাবাদের জন্য ২ হাজার ৭৬৫ হেক্টরে বীজতলা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১২৪৩ হেক্টর বীজতলা প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছে কৃষকেরা। বোরো মৌসুমে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় তিন জাতের ফলন ফলাবেন কৃষকরা। চকরিয়া ৮৭২ হেক্টরের বিপরীতে অগ্রগতি ৭৫ হেক্টর, পেকুয়া ৩৫৭ হেক্টরের বিপরীতে অগ্রগতি ২১৬ হেক্টর, রামু ৩৩৪ হেক্টরের বিপরীতে অগ্রগতি ২২১ হেক্টর, সদর উপজেলা ৩৪২ হেক্টরের বিপরীতে অগ্রগতি ১৪২ হেক্টর, উখিয়া ৩২৭ হেক্টরের বিপরীতে অগ্রগতি ৩২৫ হেক্টর, টেকনাফ ৮৫ দশমিক ৬৭ হেক্টরে বিপরীতে অগ্রগতি ১০৪ হেক্টর, মহেশখালী ৩৫৭ হেক্টরের বিপরীতে অগ্রগতি ১৩০ হেক্টর এবং কুতুবদিয়া ৮৮ হেক্টরের বিপরীতে অগ্রগতি ৩০ হেক্টর। [৫] শনিবার সকালে কক্সবাজার সদর উপজেলা, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ, ঈদগাঁও ও রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমন ধান কাটাই-মাড়াই শেষ করেই এলাকার কৃষকরা কোমর বেধে নেমে পড়েছেন ইরি-বোরো চাষের দিকে। জমিতে ইরি-বোরো বীজ রোপণ করবেন চাষিরা। ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে দল বেঁধে বীজতলা পরিচর্যাসহ বোরো ক্ষেত তৈরিতে কাজ করছেন কৃষিশ্রমিকরা। [৬] বীজতলা তৈরির পাশাপাশি কেউ কেউ সরিষা চাষের জন্য জমিও প্রস্তুতি করছেন। বর্তমান আবহাওয়া বোরো বীজ বপনের উপযোগী থাকায় ৯ উপজেলার সব ইউনিয়নের কৃষকেরা বীজতলা তৈরি ও বীজ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাটবাজারের বীজ দোকানগুলোতে দিনের প্রায় সময়ই কৃষকদের ভিড় লেগে আছে। স্থানীয বাজারে কৃষি বীজ সার বিক্রির দোকানীরা জানান, চলতি শীতে কৃষকেরা কোনো প্রকার ঝুঁকি না নিয়ে বোরো আমনের বীজতলা তৈরি করছেন। এ জন্য তাঁরা বাজার থেকে ভালো মানের বীজ ক্রয় করছেন।
[৭] কৃষকেরা জানান, ইরি-বোরোর বীজ বপনের সময় আরও কিছুটা হাতে থাকলেও ধান বীজতলা তৈরির কাজটা এবার আগেভাগেই শুরু করেছেন। এখনো ৮ শতাংশ আমন মাঠে থাকার পরেও কৃষকরা আগেভাগেই বীজতলা তৈরি করছেন। কারণ, বিগত দিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ডিসেম্বরের শুরুতে প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশা হয়। কিন্তু এবছর ডিসেম্বর শেষের দিকে এসে জেকে বসেছে শীত। শৈত্য প্রবাহের আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা। কারণ, শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে অপরিপক্ব বোরো ধানের চারার ব্যাপক ক্ষতি হয়। কৃষকরা আর-ও জানান, ১৫ - ২০ দিনের মধ্যে চারা তুলে বোরো'র আবাদ করা হবে। কিন্তু হঠাৎ শীতের প্রবাহ বেড়ে যাওয়া দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। বীজতলার চারার গোড়া বা পাতা পঁচা রোগ এবং চারা হলুদ হয়ে দুর্বল হওয়াসহ মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে জেলার কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এদিকে কৃষি উপসহকারীদের মাঠ পর্যায়ে দেখা যায় না বলে তারা জানান। কচ্ছপিয়া তিতার পাড়ার ওসমান গনি জানান, বীজের দাম আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু ধান বিক্রি করতে গেলে দাম পাওয়া যায়না। এরপরেও স্বপ্ন নিয়ে বোরো বীজতলা বুনেছি। গর্জনিয়া টাইমবাজার এলাকার আবদুর রহিম বলেন, আমনতো গেলো কারেন্ট পোকার পেটে। ধান পাইনি। ৫ শতক জমিতে আমন লাগিয়েছিলাম। ৬ হাজার টাকা খরচ করেছি। আবার বোরো বীজ বুনেছি। এখন পিছিয়ে আসার পথ নেই, আশায় বুক বেঁধে আছি। [৮] কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি'র উপপরিচালক মো : কবির হেসেন বলেন, অতিরিক্ত ঠান্ডায় বীজতলা ক্ষতি হয়। এজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাতে জমে থাকা কুয়াশা সকালে পলিথিন ও রশি দিয়ে টেনে ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজনে পটাশিয়াম ও ইউরিয়া ব্যবহার করতে পারবে। বীজতলায় সকালে পানি দিয়ে এবং রাতে সেই পানি নামিয়ে দিতে হবে। বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় না হলে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।